ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৈশ প্রহরীর কাজ করেন পারুল বেগম

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় : ১৭-০৮-২০২৪ ১২:৪২:০৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-১০-২০২৪ ১১:০২:১৮ অপরাহ্ন
নৈশ প্রহরীর কাজ করেন পারুল বেগম
নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে চললেও বিশেষ কিছু পেশায় নারীদের দেখা যায় না কখনোই। তবে সমাজে ব্যতিক্রমী এক উদাহরণ তৈরি করেছেন পারুল বেগম নামের এক নারী। তিনি এলাকায় নৈশ প্রহরীর চাকরি নিয়েছেন।

নারী কখনো নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করতে পারে নাকি? শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মনমথপুর ইউনিয়নের পূর্ব রাজাবাসর এলাকায়। একই এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের মেয়ে পারুল বেগম। 

হতদরিদ্র অসহায় নারী পারুল। মা-বাবার মৃত্যুর পর তার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। পরে নিজ বাড়ির পাশে মিশন বাজারে ছোট একটি পানের দোকান দেন। অর্থের অভাবে বেশিদিন দোকানটাও ধরে রাখতে পারেননি। পরে বাজারের দোকানদারদের সহযোগিতায় পারুল বেগম বেছে নেন মিশন বাজারে নাইট গার্ডের কাজ।

 পারুল বেগম দেখতেও ছোটখাটো হলেও তার ছিল আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসের কারণেই প্রায় দশ বছর ধরে মিশন বাজারে নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দোকান মালিকরা জানান, পারুল বেগম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই মিশন বাজারের দোকানগুলোতে কখনো চুরি হয়নি। এর আগে অনেকবার দোকানে চুরি হয়েছে। 

পারুল বেগমের বিশ্বাস আর সততা স্থানীয় মানুষের কাছে যেন গর্বের বিষয়।জানা যায়, বিয়ের এক মাসের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটে সংসার জীবনের। জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকা শহরে। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এখন ছামিউল হক নামের একমাত্র ভাগিনা ছাড়া আপন বলতে কেউই নেই পারুলের। বোনের মৃত্যুর পর নিজ সন্তানের মতো লালন করেছেন তাকে। 

দোকান পাহারা দেওয়ার বিনিময়ে যা পান তা দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কেটে যায়। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এক খণ্ড জমিতে মাটি দিয়ে গড়ে তোলা ঝুপরি ঘরে তার বসবাস। ভাগিনা ছামিউলসহ সেখানেই থাকেন তিনি। মাথা গোঁজার ঠাই না থাকায় বাকি জীবন সুন্দরভাবে কাটাতে সরকারি সহযোগিতা চান জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই নারী ।বাজারের মোটরাসাইকেল মেকানিক সরিফুল ইসলাম বলেন, পারুল দীর্ঘদিন ধরে মিশন হাসপাতাল বাজারে রাতে নাইট গার্ডের কাজ করে।

 পারুল আগে বাজারে একটা ছোট পানের দোকান চালাত। অর্থের অভাবে সেটার আর করতে পারেনি পরে বাজারে দোকান পাহারা দেয়ার কাজ নেয়। পরুল খুব অহসহায়। বাজার পাহারা দিয়ে যে টাকা পায় তাতে ঠিকমতো তিন বেলা খাবার জোটে না। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা করলে তাকে আর বাজারে পাহারা দিতে হতো না।বাজারে কাপড় ব্যবসায়ী নাহিদ ইসলাম বলেন, আমি মিশন বাজারে প্রায় ১০ বছর ধরে কাপড় ও টেইলার্সের ব্যবসা করে আসছি । 

আমি দোকান দেওয়ার পর থেকে দেখে আসছি পারুল নামের এক ভদ্রমহিলা আমাদের বাজারে নৈশ প্রহরীর কাজ করেন। উনি যেভাবে বাজারের দোকানগুলো পাহারা দেন একজন পরুষ মানুষও এভাবে পারবে না। উনি বাজারে রাতে পাহারা দেন বলে আমরাও নিশ্চিন্তে বাসায় ঘুমাতে পারি।

বাজারের আরেক দোকানদার নাসিম ইসলাম বলেন, পারুল আমাদের বাজারে দীর্ঘদিন থেকে দোকান পাহারা দেন। উনি এই বাজারের নৈশ প্রহরীর কাজ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। আমরা দোকনদাররা ভুলে যদি একটা তালা না দিয়েও চলে যাই তাহলে পারুল আপা ফোন করে বলেন, দোকানে তালা খোলা, বাজারে এসে তালা দিয়ে যাও।

নৈশ প্রহরী পারুল বেগম বলেন, জীবন জীবিকার তাগিদে আমি রাতে বাজার পাহারা দেওয়ার জন্য নাইট ডিউটির কাজ নিয়েছি। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর এ কাজ করে আসছি। মাত্র চার হাজার টাকা পাই তা দিয়ে খুব কষ্ট করে একমাত্র ভাগিনাকে নিয়ে থাকি।

 একটা মেয়ে মানুষ হয়েও এ কাজ করি কারণ অন্য কোনো কাজ পাই না। বাজার পাহারা না দিলে খাবার জুটত না। তাই বাধ্য হয়ে এ কাজ বেছে নিয়েছি। এখন আমার থাকার মতো একটা ভালো ঘর নেই। আমাকে যদি সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা করা হয় তাহলে একটু ভালোভাবে চলতে পারব।

মনমথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ আলী শাহ বলেন, পারুল নামের এক ভদ্রমহিলা আমার ইউনিয়ন পরিষদের মিশন বাজারে নৈশ্য প্রহরীর কাজ করেন। বিষয়টা আমার জানা ছিল না। আমি অবগত হলাম। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার ভাতা প্রদানের ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারি সব সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দেব।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ